ফেনীর সোনাগাজীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাব উদ্দিন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ রেখে পালিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা ও স্বজনরা। রোববার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের হোসেন ডিলারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। রাত ২টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ইসলামী আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকজন মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সমাপ্ত করেন।
ইতালিতে নাগরিকত্ব পাবেন যেভাবে? |
এলাকবাসী, ইউপি চেয়ারম্যান ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, হোসেন ডিলার বাড়ির সাহাব উদ্দিন চট্রগ্রামের একটি পেট্রোল পাম্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৭-৮ দিন পূর্বে জ্বর, কাশি, শ্বাস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ২৭মে তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে সপরিবারে চট্রগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরেন। দুই দিন তিনি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করালেও রোববার বিকালে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করেন। রাত ৮টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করলে তার বসত ঘরের দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষে মরদেহ রেখে পরিবারের সদস্যরা ও বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ইসলামী আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের লোকদের খবর দেন। দাফন টিমের সদস্যদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট ও থানা থেকে মরদেহ রাখার জন্য একটি ব্যাগ সংগ্রহ করেন। রাত ১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে তিনি সুনশান নিরবতার একটি ভুতের বাড়ি দেখতে পেয়ে নিজে অনেকটা ভয় পেয়ে যান। গ্রামের মসজিদে রাখা লাশ বহনের খাট ব্যাবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা। কবর খোঁড়ার কোদালও দিচ্ছেননা কেউ। মরদেহ গোসল করানোর জন্য সমাজের পর্দাও না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সমাজপতিরা। নিজের টাকায় কাপনের কাপড় কিনে, সমাজপতি, গ্রামের লোকদের অনেকটা বুঝিয়ে খাট ও পর্দার কাপড় সংগ্রহ করেন তিনি। গ্রাম পুলিশ ও ইসলামী আন্দোলনের লোকদের সাথে নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেন চেয়ারম্যান। কবর খোঁড়া, জানাজা ও দাফন কাজে অংশ নেন চেয়ারম্যান সহ ৭জন ব্যক্তি।
মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাব উদ্দিনকে শেষ বিদায় জানাতে পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বাড়ির লোকজন কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই পালিয়ে গেছে। অথচ মৃত লোকটি পেট্রোল পাম্পে কর্মরত থেকে ৪ ভাইকে প্রবাসে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনটি মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাইদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেও বহু অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকা পয়সা রোজগার করে সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অথচ মহান আল্লাহ তার এমন একটি মৃত্যু দিয়েছেন শেষ বিদায়ে কোন স্বজন তার পাশে নেই। এর চেয়ে হৃদয় বিদারক আর কি হতে পারে? মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি কোন শত্রুকেও যেন তিনি এমন মৃত্যু না দেন। এই মৃত্যু থেকে পৃথিবীর সব মানুষ শিক্ষা নেয়া উচিৎ। আসলে কার জন্য এই উপার্জন আর অর্থবিত্ত রেখে যাওয়া? করোনার এই মহামারিতে মানবতাও যেন আজ থমকে গেছে! সাহাব উদ্দিন মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩মেয়ে, এক ছেলে ও ৪ভাই সহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তিনি ভাদাদিয়া গ্রামের হোসেন ডিলারের বাড়ির মরহুম আনার আহম্মদের ছেলে।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎফল দাস জানান, করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা
হয়েছে।