সোনাগাজীতে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়লো ওয়ান ইলেভেনের খল নায়ক হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরণ চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করা হয়েছে ছাগল কাণ্ডের আলোচিত মতিউর রহমানের শ্বশুর বাড়িতে তৈরিকৃত ডুপ্লেক্স বাড়ির আসবাবপত্র। মতিউর ফেনীর পতিত গডফাদার নিজাম হাজারীর মামাতো বোনের স্বামী । পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ওয়ান ইলেভেনের কুশিলব মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি সুলাখালিতে রাত আটটার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হয়ে ডুপ্লেক্সে বসতঘর ও দুটি কাছারি ঘরে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরের মালামাল ভস্মিভূত হয়ে যায়য়। সাড়ে আটটার দিকে আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরণের ডুপ্লেক্স বাড়িতে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা অগ্নিসংযোগ করে। এতে ঘরের মালামাল ভস্মিভূত হয়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবি মাসুদ একজন দুর্নীতিবাজ এবং ওয়ান ইলেভেনের খল নায়ক হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও বিএনপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ওযান ইলেভেনে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিজে বসে থেকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয় মাসুদ গং। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আ.লীগ সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর পুরস্কার হিসেবে তাকে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত করেন হাসিনা। পরপর দুইবার তাকে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করে আ.লীগ সরকার। ওয়ান ইলোভেনের সময় এবং রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় অস্ট্রেলিয়াতে সেকেণ্ড হোম করেন তিনি। কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি।
জনশ্রুতি রয়েছে অস্ট্রলিয়াতে বিপুল অংকের টাকা পাচার করেছেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকায় ট্রাভেলস ব্যবসা শুরু করেন। রাজধানীতে একটি পাঁচতারকা হোটেল করেন তিনি। মালয়েশিয়ায় লোক নেওয়ার চার সিণ্ডিকেটের এক সিণ্ডিকেট মাসুদ গং। ওই কেলেঙ্কারীর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। আ. লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও কৌশলগত কারণ দেখিয়ে রাতারাতি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেনন তিনি। ২০১৮ সালে রাতের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার ছোট ভাই সাফ উদ্দিন হারুনকে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য, জমি জবর দখল সহ নানা অপকর্মে সমালোচিত হন তিনি। তার স্ত্রী, ভাই ও পিএস সহ চার খলিফা দিয়ে অপকর্মের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। ২০২৪ সালের ফের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্যাহর কাছে ধরাশয়ী পড়েন তিনি। ভোটের দিন আ.লীগের লোকজন দিয়ে কেন্দ্র দখল করে একতরফা নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। অবশ্যই সেই দিন নির্বাচন বর্জন করেছিলেন স্বাতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্যাহ। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পরও বিনা ভোটের এমপি ও ১/১১এর খলনায়ক হিসেবে সাধারন মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ৮টি মামলা হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন মাসুদ ও তার বিতর্কিত ভাই সাইফ উদ্দিন হারুন। মাসুদ ও তার ভাই হারুণ গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে সাধারণ মানু্ষ। তার ফাঁসি দাবি করে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গলায় ফাঁসির রশি লাগিয়ে পোস্টারিংও করা হয়। কিস্তু মাসুদ দেশে থেকেও কেন গ্রেফতার হয়নি বা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নে জনমনে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জনসভায় সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১/১১এর খলনায়ক এবং তারেক রহমানের মেরুদণ্ড ভাঙাকারি জুলাই বিপ্লবে খুনের মামলার আসামি মাসুদ এখনও কেন গ্রেফতার হননি সরকারের কাছে জবাব চান তিনি। ভারতে বসে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের জের ধরে সারা দেশের ন্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা মাসুদের বাড়িতে অগ্নিনংযোগ করেন। এলকাবাসীর দাবি তারেক রহমানের মেরুদণ্ড ভাঙা, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা এবং স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে সমালোচিত মাসুদ একজন বিশ্বাস ঘাতক। চাকরি জীবনে মাসুদ রক্ষী বাহিনীর লোক হিসেবে পরিচিত হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই মেজর অব. সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা হিসেবে সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি নিয়ে সর্বশেষ জিয়া পরিবারের সঙ্গেও বিশ্বাস ঘাতকতা করেন মাসুদ। এ দিকে তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা পর বিক্ষুব্ধ জনতা নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই আমিরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরণের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তার চাচাতো বোনের স্বামী মতিউরের তৈরীকৃত ডুপ্লেক্স বাড়িতে ঢুকে আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। । সোনাগাজী মডেল থানার ওসি বায়েজীদ আকন দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং মতিউরের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেনা সদস্যরা সহ পুলিশ দল ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছেন।