বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং         ১০:২৩ অপরাহ্ন
  • মেনু নির্বাচন করুন

    মিরসরাইয়ে আড়াই বছরে ২২ বার ‘অলৌকিক’ আগুনে দিশেহারা এক বাড়ির ৭ পরিবার!


    ফাইল ছবি
    শেয়ার করুনঃ

    মিরসরাইয়ে আড়াই বছরে ২২ বার ‘অলৌকিক’ আগুনে দিশেহারা এক বাড়ির ৭ পরিবার!

    এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই

    মিরসরাইয়ে ‘অলৌকিক’ আগুন আতঙ্কে দিশেহারা এক বাড়ির ৭ পরিবার। গত আড়াই বছরে ২২ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যদিয়ে দিনযাপন করছেন পরিবারগুলো। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে ঘরের আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র, সেই সঙ্গে রয়েছে মৃত্যুভয়।

    মিরসরাই উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওচমানপুর গ্রামের হাজী গণি আহম্মদ মিস্ত্রি বাড়ীতে এই অলৌকিক আগুনের ঘটনা ঘটে চলছে। অগ্নিকান্ডের শিকার আবুল কাশেম, দিদারুল আলম, খায়েজ আহম্মদ, জয়নাল আবেদীন, জাহাঙ্গীর আলম, রেজাউল করিম ও শহিদুল ইসলামের পরিবার।

    ভুক্তভোগীদের দাবি, বাড়িতে পাহারা বসিয়ে এবং ওঝা-জ্যোতিষী এনেও আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা আগুন আতঙ্ক

    থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

    আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ভয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন এবং পাশাপাশি আসবাবপত্রও নিয়ে যান। এছাড়া ঘরে যেকোন সময় আগুন লেগে সব পুড়ে যাওয়ার আতঙ্কে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র বাইরে রেখে পাহারা দিচ্ছেন কয়েকটি পরিবার। দিনে ও রাতে আগুন আতঙ্কে ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়া ও ঘুমাতেও পারছেন না তারা। আড়াই বছর আগে ওই বাড়ির জয়নাল আবেদীনের লাকড়ী ঘর থেকে সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। যা তারা প্রথমে মনে করেছিলেন কেউ

    শত্রুতাবশত আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ওই ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর আবার জয়নালের রান্নাঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তারই ৫ মাস পর একই

    বাড়ির খায়েজ আহম্মদের রান্নাঘরে রাখা খড়ের মধ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ভোর সাড়ে ৪ টায় শহিদুল ইসলামের লাকড়ী ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর প্রায় এক বছর ধরে কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরের গত রমজানের আগে থেকে আবার আগুন লাগা শুরু হয়। এবার সন্ধ্যার সময় ওই বাড়ির আবুল কাশেমের ঘরের পাশ থেকে আগুন লাগে। ওই আগুনের আধঘন্টা পর ফের বসতঘরের

    পেছনে খড়ের মধ্যে আগুন লেগে যায়। এরপরদিন সন্ধ্যায় রান্নাঘরের বেড়ার মধ্যে আগুন ধরে যায়। এর ৭ দিনপর সন্ধ্যায় ওই বাড়ির সামনের মোশাররফ হোসেনের একটি খড়ের গাদায় আগুন লেগে যায়। ওই ঘটনার ৩ দিনপর শহিদুল ইসলামের লাকড়ির ঘরে রাত ১২ টার সময় আগুন লেগে যায়। আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর ৩ দিন পর জয়নাল আবেদীনের লাকড়ি ঘরে আগুন লাগে রাত ২ টায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১ দিন পর রাত ১২ টার সময় আবার আগুন লাগে খায়েজ আহম্মদের বসতঘরের বেড়রুমে। সেদিন তারা কোনমতে প্রাণে রক্ষা পায়। এর পরদিন জয়নালের বসতঘরের আলনার মধ্যে আগুন লেগে যায় এর কিছুক্ষণ পর জাহাঙ্গীর আলমের বসতঘরে আগুন লেগে যায় তারই ১ ঘন্টা পর জয়নাল আবেদীনের বসতঘরের বেড়রুমে আগুন লাগে। গত ১৭ মে আবুল কাশেমের বসতঘরে দুপুর ১ টায়, দুপুর ৩ টায় ও রাত সাড়ে ১০ টায় একদিনে ৩ বার আগুন লাগে। ১৮ মে দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় আবুল কাশেমের বসতঘরের এক পাশে আগুন লেগে যায়, এছাড়া

    রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ফের আগুন লাগে। ওইদিন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান অগ্নিকান্ডস্থল পরিদর্শন করেন।

    সর্বশেষ ১৯ মে বিকাল ৩ টায় জয়নাল আবেদীনের লাকড়ি ঘরে আগুন লেগে যায়।

    ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, অলৌকিকভাবে একদিনে ৩ বারও আগুন লাগে ওই বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। গত আড়াই বছরে অগ্নিকান্ডের শিকার হয়েছেন ওই বাড়ির আবুল কাশেম ৮ বার, দিদারুল আলম ২ বার, খায়েজ আহম্মদ ৩ বার, জয়নাল আবেদীন ৪ বার, জাহাঙ্গীর আলম ১ বার, রেজাউল করিম ১ বার, শহিদুল ইসলাম ২ বার।

    এছাড়া প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেন ১ বার। ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‌গত বছরের ১৮ মার্চ ভোর সাড়ে ৪ টায় আমার লাকড়ী ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ হয়তোবা শত্রুতাবশত এই আগুন লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে দেখি আমাদের

    বাড়ির ৭ পরিবারের সবার বসতঘরে নয়তোবা রান্নাঘরে কোথাওনা কোথাও আগুন লেগে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আগুন নিচ থেকে ধরে তবে এই আগুনের উৎপত্তি মাটি থেকে ২-৩ ফুট উপর থেকে। বারবার অলৌকিক এই আগুনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।

    ভুক্তভোগী আবুল কাশেম জানান, তিনি ৮ বার অগ্নিকান্ডের শিকার হয়েছেন। একেকসময় একেকস্থানে আগুন ধরছে। আমাদের বাড়ির সব মানুষ আগুন আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারছেন না, ঘুমোতে পারেন না। সব কাজ ফেলে দিয়ে এখন শুধু আগুন পাহারা দিচ্ছেন সবাই।

    ভুক্তভোগী দিদারুল আলম জানান, আগুন নেভানোর জন্য প্রতিটি পরিবারের বসতঘরের ভেতরে, বাড়ির উঠানে, বসতঘরের সামনে বড় পাতিল, কলসি, বালতি ও বিভিন্ন পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বাড়ির সবাই উঠানে বসে থেকে পাহারায় রয়েছে; কিন্তু এই আগুনের ঘটনায় আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভুক্তভোগী খায়েজ আহম্মদ জানান, হঠাৎ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১ দিন পর রাত ১২ টার সময় আমার বসতঘরের বেড়রুমে আগুন ধরে যায়। সবাই মিলে

    সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেদিন পরিবারের সদস্যরা কোনমতে প্রাণে রক্ষা পায়। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। যেহেতু কাউকে এই আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেননি তিনি বা এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই সবাই বলছে এই আগুন জিনে ধরিয়ে দিচ্ছে।

    মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইনচার্জ ইমাম হোসেন পাটোয়ারী জানান, ওই বাড়িতে দীর্ঘ আড়াই বছরে ২২ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমন অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে আমরা গত ১৬ মে ঘটনাস্থল গিয়েও অগ্নিকান্ডের কোন সূত্রপাত উদঘাটন করতে পারিনি। এই ব্যাপারে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে

    যোগাযোগ করেছি। এখানে বারবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা রহস্যজনক। তবে আগুনের ঘটনা পরিবেশগত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, ওচমানপুর ইউনিয়নের ওচমানপুর গ্রামে আড়াই বছর আগে থেকে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। হঠাৎ হঠাৎ করে ওই বাড়িতে দিনে অথবা রাতে এই আগুন লাগে। প্রথমে তারা নাশকতা মনে করেছিল পরবর্তীতে তারা বিষয়টি অলৌকিক বলে মনে করছেন। গত ১৮ মে আমি যখন ওই বাড়ি

    পরিদর্শন করতে যাই তখনও আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে কি কারণে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সেখানকার বাতাস পরীক্ষা করা যেতে পারে। হয়তোবা বাতাসে এমন কোন উপাদান থাকতে পারে যেটা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে আগুনে রুপান্তর হতে পারে। আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে এটির ব্যাখা দাঁড় করানোর জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেক্ষেত্রে কিছু ডিপার্টমেন্টের আমাদের সহায়তা লাগবে।



    আপনার মন্তব্য লিখুন
    © 2024 chhagalnaiya.com All Right Reserved.